খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতাদের
মঙ্গলবার বিকালে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠকে নেতারা তেমনি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হবে বলেও আভাস দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের একাধিক শীর্ষনেতা। আগামী ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরকে সামনে রেখে নানা ধরনের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে ঘিরে তার ‘মুক্তির’ বিষয়টির ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কেমন হবে। সে কারণে এখন থেকে কার্যকর প্রতিবাদ গড়ে তুলতে না পারলে তাদের রাজনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে বিএনপি কি ধরণের কর্মসূচী দিবে তার ওপর। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মতে এই মুহূর্তে বিএনপির সামনে তাদের দলীয় প্রধানের মুক্তির আন্দোলনের বাইরে অন্য কোনও বাস্তবতা নেই। নেতাকর্মীরা উদগ্রীব হয়ে আছেন কর্মসূচির জন্য। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি ইতিবাচক না হলে তাদের সক্রিয়ভাবেই প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি যদি গতানুগতিক কর্মসুচী দেয় তাহলে আন্দোলন করে আশানরুপ কোন ফল পাওয়া যাবে না।
বৈঠকে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে। চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া মানবিক কারণে জামিন পাওয়ার যোগ্য।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেশে শান্তি শৃঙ্খলা দরকার। এজন্য খালেদা জিয়ার জামিন দিতে হবে। তা না হলে সরকারের ক্ষতি হবে, দেশ নৈরাজ্যের দিকে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে।’
বৈঠকে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘যা করার ঠিকঠাক মতো করেন। না করলে এই সব ফ্রন্ট রাখার কোনও মানে নেই।’
তবে নিজেদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচী কি হবে তা স্পষ্ট করেননি বিএনপির কোন দায়িত্বশীল নেতা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন ২নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের আগামী ৫ ডিসেম্বর শুনানিকে সামনে রেখে কর্মসূচি ঘোষণার তাগিদ বোধ করছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা। এক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের আগ্রহ অনেকটাই প্রকাশ হয়েছে বৈঠকে। তিনি বৈঠকে ‘শুধুমাত্র বিবৃতি দিয়ে রাজনীতির কী লাভ, আন্দোলন না করে’ এমন প্রসঙ্গ তোলেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কামাল হোসেন ৫ তারিখের শুনানিতে যেতে পারেন। বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র অবশ্য কর্মসূচি বা আন্দোলনের প্রসঙ্গে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার না করলেও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যমত সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন। এই সূত্রের দাবি, বিরাজমান দেশের পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখে ঐক্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে বিরোধী সব দল।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি পক্ষ জানিয়েছে, দলের মধ্যে আন্দোলন বা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই। এমনকি এ বিষয়ে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। তবে তারা এও বলেছেন, আগামী ৫ ডিসেম্বর জামিন শুনানির পর বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করবে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন না হলে কর্মসূচি দেয়া হবে। কর্মসূচির ধরণ গতানুগতিক বিক্ষোভ মিছিল বা মানববন্ধনের মতো হবে নাকি নতুন কোনও পরিবর্তন আসবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ৫ ডিসেম্বর জামিন না হলে বৈঠকে করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মাঠে বিএনপির সক্রিয় না হওয়ার পেছনে ভিন্ন একটি কারণ জানিয়েছে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। সূত্রটির দাবি, দলের বৈদেশিক নীতি পুরোপুরি পশ্চিমে হেলে পড়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাব সূত্র এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের ইন্টারেস্ট বলয়ে প্রবেশ করেছে। তবে শেষ নির্বাচনে জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে দেয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা এখনও দিতে পারেনি বিএনপি। সে অর্থে নতুন কোনও পরিস্থিতি ডেকে আনতে চাইবে না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সুত্র জানায়, এই মুহূর্তে বড় ধরনের আন্দোলন করার মতো বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। রাজধানীতে আন্দোলন সফল করার দায়িত্ব থাকে মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের ওপর। কিন্তু এই সংগঠনগুলোর কোনটির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয়।
অঙ্গ-সংগঠনের দুর্বলতা দেখিয়ে সুত্র আরও জানায়, ‘গত ৩ বছর ধরে ১১ থেকে ১২ জন দিয়ে কোনোভাবে খুঁড়িয়ে চলছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। আর আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত মহানগর উত্তর বিএনপি। ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কোর্টের সঙ্গে চলছে ঝামেলা। ফলে ঢাকায় আন্দোলন জমিয়ে না তুলতে পারলে সারাদেশে আন্দোলন করে কোনও লাভ হবে না।
from tv
Post a Comment